"পারস্পরিক সন্মান দিলে বিদেশে ও সন্মান মেলে"
বীনা সিক্রি তখন মালয়েশিয়ায় ভারতের হাইকিমশনার। একবার মালয়েশিয়ার পুলিশ অবৈধ শ্রমিকদের চিহ্নিত করতে বিভিন্ন মেসে অভিযান চালালো। অভিযান চলাকালে কোন এক ভারতীয়র পাসপোর্ট ছুড়ে মারে এক পুলিশ সদস্য। এ ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ হয় ওই ভারতীয় নাগরিক। তার মনে হয় তার পাসপোর্ট অপমান মানে তার দেশকে অপমান।
ভারতীয় শ্রমিকরা সাথে সাথে এই খবর তাদের হাইকমিশনারকে জানায়। খবর পেয়ে সাথে সাথে বীনা সিক্রি যোগাযোগ করেন নয়াদিল্লিতে। তিনি মনমোহন সিং সরকারকে বলেন, মালয়েশিয়া আমাদের পাসপোর্টকে অবমাননা করেছে। এর মানে ভারতকে অপমান। ২৪ ঘন্টার মধ্যে মালয়েশিয়ার সঙ্গে ভারতের সব ধরনের বিমান যোগাযোগ বন্ধ থাকবে। বন্ধ করে দেয়া হবে সব বানিজ্য।
ভারত সরকার ততক্ষনাৎ এই সিদ্ধান্ত নেয়। সত্যি সত্যি বন্ধ হয়ে যায় মালয়েশিয়ার সাথে বিমান চলাচল। মালয়েশিয়ার তখন মাথায় হাত। ২৪ ঘন্টা পার হবার আগেই মালয়েশিয়া সরকার ভারতের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয় এবং বলে এই ধরনের কাজ আর কখনোই হবে না। মালয়েশিয়ায় এরপর নাকি কখনো ভারতীয় শ্রমিকরা এমন অপমানের শিকার হননি। আমি ২০১০ সালে বাংলাদেশি প্রবাসীদের দুর্দশা নিয়ে কাজ করতে মালয়েশিয়ায় গিয়ে এই ঘটনাটি জেনেছিলাম।
কথাগুলো বলার কারণ এক দশক ধরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি প্রবাসী বাংলাদেশিরা কীভাবে পদে পদে নিগৃহিত হন। মালয়েশিয়ার বাংলাদেশিদেরা বলছিলেন, ভারতের একজনের পাসপোর্ট ছুড়ে মারলে ভারত সরকার এতো কিছু করে অথচ বাংলাদেশের মানুষের উপর চরম নির্যাতন হলেও সরকার নির্বিকার থাকে। বিনা কারণে মালয়েশিয়ায় রতান (এক ধরনের বেতের বাড়ি) খায় বাংলাদেশিরা। সৌদি আরব, আরব আমিরাত, ওমানসহ বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকরাও প্রায়ই অভিযোগ করেন, বিদেশি পুলিশরা অভিযান চালানোর সময় তাদের সঙ্গে ভালো আচরনণ করে না।
আমার নিজের মূল্যায়ন হলো এই যে বিদেশিরা বাংলাদেশিদের সঙ্গে ভালো আচরণ করে না কারণ বাংলাদেশ তার নাগরিকদের সম্মান দেয় না। একটা দেশের নাগরিক তার নিজের দেশের নাগরিকদের যেমন সম্মান দেয় ওই দেশও সেভাবেই সম্মান দেয়। বিদেশিরা যখন দেখে বাংলাদেশিরা তার নিজের দূতাবাসের ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে, বৃষ্টিতে ভিজে। কাজেই তারাও নির্যাতন করে।
অথচ পৃথিবীর যে দেশেই যান দেখবেন ভারতের দূতাবাস তার নাগরিকদের জন্য সর্ব্বোচ্চটুকু করছে। শুধু ভারত কেন ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা সবাই তার নাগরিকদের জন্য করে। অার অামাদের কোন শ্রমিক রাষ্ট্রদূত তো দূরের কথা অফিস সহকারীর কাছ পর্যন্ত যেতে গলদঘর্ম হতে হয়।
যেহেতু আমাদের রাষ্ট্র, আমাদের দূতাবাস আমাদের নাগরিকদের সম্মান দেয় না তাই মালয়েশিয়া, সৌদি, কাতার, কুয়েত, দুবাই সবাই তাই করে। কাল আমরা আমাদের নাগরিকদের সম্মান দিলে বাকিরাও দেবে।
আমি জানি ভারতের অনেক কিছু খারাপ। কিন্তু দেশপ্রেম কি জিনিষ আর নিজ দেশের নাগরিকদের কিভাবে সম্মান দিতে হয় সেটা আমরা ভারতের কাছ থেকে অন্তত শিখতে পারি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তো তার একজন নাগরিক বাঁচাতে গোটা একটা দেশে যুদ্ধ চালাতে রাজি।
আজকের দিনে এই কথাগুলো বলার কারণ কাল ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস। প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি এখন বিদেশে। এরা যখন বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তখন পাসপোর্ট তৈরি থেকেই হয়রানির শুরু। এরপর রিক্রুটিং এজেন্সির দালাল ও প্রতারক এজেন্সি, উচ্চমূল্যে ভিসা কেনাবেচা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সরকারি ছাড়পত্র—সব ক্ষেত্রে সীমাহীন ভোগান্তি পোহায়। দেশের আকাশ পার হলে শুরু হয় বিরূপ প্রকৃতি, অমানুষিক পরিশ্রম, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে জীবনযাপন, নির্যাতনসহ আরও কত কি। এতো নির্যাতনের পরেও প্রবাসীরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠায়। সেই টাকায় এখন দেশের অর্থনীতি টিকে আছে।
অথচ আমরা তাদের যথাযথ সম্মান দেই না। পাঁচ-সাত বছর পর যখন তারা দেশে ফেরেন প্লেন থেকে নামার জন্য তারা ছটফট করেন। কিন্তু বিমানবন্দরে নামলেই শুরু হয় বাজে ব্যাবহার। এতো কিছু কেন এনেছেন?আর পদে পদে অবহেলা তো নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার।
শুধু কী রাষ্ট্র বা দূতাবাস প্রবাসে থাকা অনেক ধনী কিংবা বাংলাদেশ থেকে যাওয়া বড়লোকেরাও এই প্রবাসীদের অসম্মান করে। ছোট করে দেখে। অথচ এরা না থাকলে ঋণনির্ভর বাংলাদেশ আজকে অর্থনীতিতে শক্তিশালী হতো না।
আমি মনে করি এই অন্যায় বন্ধ হওয়া উচিত। রাষ্ট্র যদি আমাদের এই নাগরিকদের প্রাপ্য সম্মান দেয়, দূতাবাসগুলোতে যদি প্রবাসীরা একটু ভালো ব্যাবহার পায় এবং ভারতের মতো সবসময় যদি আমরা আমাদের নাগরিকদের সম্মান দেই তবে সারা পৃথিবীই বাংলাদেশিদের প্রাপ্য সম্মান দেবে। সেই অাহবান জানিয়ে আজকের এই দিনে ভালোবাসা কোটি প্রবাসীর জন্য যারা বিদেশে থেকেও দেশের প্রতি ভালোবাসাটা জিইয়ে রেখেছেন।
আপনারা যেখানে থাকুন ভালো থাকুন। আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবসে আপনাদের স্যালুট।
কার্টেসি: Shariful Hasan
ভারতীয় শ্রমিকরা সাথে সাথে এই খবর তাদের হাইকমিশনারকে জানায়। খবর পেয়ে সাথে সাথে বীনা সিক্রি যোগাযোগ করেন নয়াদিল্লিতে। তিনি মনমোহন সিং সরকারকে বলেন, মালয়েশিয়া আমাদের পাসপোর্টকে অবমাননা করেছে। এর মানে ভারতকে অপমান। ২৪ ঘন্টার মধ্যে মালয়েশিয়ার সঙ্গে ভারতের সব ধরনের বিমান যোগাযোগ বন্ধ থাকবে। বন্ধ করে দেয়া হবে সব বানিজ্য।
ভারত সরকার ততক্ষনাৎ এই সিদ্ধান্ত নেয়। সত্যি সত্যি বন্ধ হয়ে যায় মালয়েশিয়ার সাথে বিমান চলাচল। মালয়েশিয়ার তখন মাথায় হাত। ২৪ ঘন্টা পার হবার আগেই মালয়েশিয়া সরকার ভারতের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয় এবং বলে এই ধরনের কাজ আর কখনোই হবে না। মালয়েশিয়ায় এরপর নাকি কখনো ভারতীয় শ্রমিকরা এমন অপমানের শিকার হননি। আমি ২০১০ সালে বাংলাদেশি প্রবাসীদের দুর্দশা নিয়ে কাজ করতে মালয়েশিয়ায় গিয়ে এই ঘটনাটি জেনেছিলাম।
কথাগুলো বলার কারণ এক দশক ধরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি প্রবাসী বাংলাদেশিরা কীভাবে পদে পদে নিগৃহিত হন। মালয়েশিয়ার বাংলাদেশিদেরা বলছিলেন, ভারতের একজনের পাসপোর্ট ছুড়ে মারলে ভারত সরকার এতো কিছু করে অথচ বাংলাদেশের মানুষের উপর চরম নির্যাতন হলেও সরকার নির্বিকার থাকে। বিনা কারণে মালয়েশিয়ায় রতান (এক ধরনের বেতের বাড়ি) খায় বাংলাদেশিরা। সৌদি আরব, আরব আমিরাত, ওমানসহ বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকরাও প্রায়ই অভিযোগ করেন, বিদেশি পুলিশরা অভিযান চালানোর সময় তাদের সঙ্গে ভালো আচরনণ করে না।
আমার নিজের মূল্যায়ন হলো এই যে বিদেশিরা বাংলাদেশিদের সঙ্গে ভালো আচরণ করে না কারণ বাংলাদেশ তার নাগরিকদের সম্মান দেয় না। একটা দেশের নাগরিক তার নিজের দেশের নাগরিকদের যেমন সম্মান দেয় ওই দেশও সেভাবেই সম্মান দেয়। বিদেশিরা যখন দেখে বাংলাদেশিরা তার নিজের দূতাবাসের ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে, বৃষ্টিতে ভিজে। কাজেই তারাও নির্যাতন করে।
অথচ পৃথিবীর যে দেশেই যান দেখবেন ভারতের দূতাবাস তার নাগরিকদের জন্য সর্ব্বোচ্চটুকু করছে। শুধু ভারত কেন ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা সবাই তার নাগরিকদের জন্য করে। অার অামাদের কোন শ্রমিক রাষ্ট্রদূত তো দূরের কথা অফিস সহকারীর কাছ পর্যন্ত যেতে গলদঘর্ম হতে হয়।
যেহেতু আমাদের রাষ্ট্র, আমাদের দূতাবাস আমাদের নাগরিকদের সম্মান দেয় না তাই মালয়েশিয়া, সৌদি, কাতার, কুয়েত, দুবাই সবাই তাই করে। কাল আমরা আমাদের নাগরিকদের সম্মান দিলে বাকিরাও দেবে।
আমি জানি ভারতের অনেক কিছু খারাপ। কিন্তু দেশপ্রেম কি জিনিষ আর নিজ দেশের নাগরিকদের কিভাবে সম্মান দিতে হয় সেটা আমরা ভারতের কাছ থেকে অন্তত শিখতে পারি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তো তার একজন নাগরিক বাঁচাতে গোটা একটা দেশে যুদ্ধ চালাতে রাজি।
আজকের দিনে এই কথাগুলো বলার কারণ কাল ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস। প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি এখন বিদেশে। এরা যখন বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তখন পাসপোর্ট তৈরি থেকেই হয়রানির শুরু। এরপর রিক্রুটিং এজেন্সির দালাল ও প্রতারক এজেন্সি, উচ্চমূল্যে ভিসা কেনাবেচা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সরকারি ছাড়পত্র—সব ক্ষেত্রে সীমাহীন ভোগান্তি পোহায়। দেশের আকাশ পার হলে শুরু হয় বিরূপ প্রকৃতি, অমানুষিক পরিশ্রম, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে জীবনযাপন, নির্যাতনসহ আরও কত কি। এতো নির্যাতনের পরেও প্রবাসীরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠায়। সেই টাকায় এখন দেশের অর্থনীতি টিকে আছে।
অথচ আমরা তাদের যথাযথ সম্মান দেই না। পাঁচ-সাত বছর পর যখন তারা দেশে ফেরেন প্লেন থেকে নামার জন্য তারা ছটফট করেন। কিন্তু বিমানবন্দরে নামলেই শুরু হয় বাজে ব্যাবহার। এতো কিছু কেন এনেছেন?আর পদে পদে অবহেলা তো নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার।
শুধু কী রাষ্ট্র বা দূতাবাস প্রবাসে থাকা অনেক ধনী কিংবা বাংলাদেশ থেকে যাওয়া বড়লোকেরাও এই প্রবাসীদের অসম্মান করে। ছোট করে দেখে। অথচ এরা না থাকলে ঋণনির্ভর বাংলাদেশ আজকে অর্থনীতিতে শক্তিশালী হতো না।
আমি মনে করি এই অন্যায় বন্ধ হওয়া উচিত। রাষ্ট্র যদি আমাদের এই নাগরিকদের প্রাপ্য সম্মান দেয়, দূতাবাসগুলোতে যদি প্রবাসীরা একটু ভালো ব্যাবহার পায় এবং ভারতের মতো সবসময় যদি আমরা আমাদের নাগরিকদের সম্মান দেই তবে সারা পৃথিবীই বাংলাদেশিদের প্রাপ্য সম্মান দেবে। সেই অাহবান জানিয়ে আজকের এই দিনে ভালোবাসা কোটি প্রবাসীর জন্য যারা বিদেশে থেকেও দেশের প্রতি ভালোবাসাটা জিইয়ে রেখেছেন।
আপনারা যেখানে থাকুন ভালো থাকুন। আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবসে আপনাদের স্যালুট।
কার্টেসি: Shariful Hasan
Comments
Post a Comment